করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আইনজীবীদের সাহায্যের জন্য জেলা থেকে ক্রমান্বয়ে চাপ বাড়ছে রাজ্য বার কাউন্সিলের উপরে। রাজ্যের প্রায় ৩৩ হাজার আইনজীবীর ‘ভরসা’ সেই কাউন্সিল অবশ্য এখনও তাঁদের তেমন আশা দেখাতে পারেনি। আবেদন করলে কিছু টাকা দেওয়ার আশ্বাসটুকুই শুধু দিয়েছেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেব।
যদিও কাউন্সিলের অধীন বিভিন্ন খাতে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা জমা আছে বলে হিসেব দিচ্ছেন রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্যরাই। এখন করোনার মতো অতি গুরুতর পরিস্থিতিতে ওই সব খাত থেকে কিছু কিছু টাকা নিয়েই আর্থিক অনটনে থাকা আইনজীবীদের সাহায্য করার জন্য দরবার শুরু করেছেন কাউন্সিলেরই কয়েকজন সদস্য। তাঁদের যুক্তি, প্রতিটি খাতে আইনজীবীদের দেওয়া টাকাই জমা রয়েছে। এ দিকে এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যার থেকে খারাপ অবস্থা গত ১০০ বছরে দেখা যায়নি। সেই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিচার করে দ্রুত আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ করার দাবি তুলছেন আইনজীবীরাও।
অশোক দেব যখন টাকা দেওয়ার শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন, বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক ঢনঢনিয়া তখন হাইকোর্ট বারের অনটনে থাকা আইনজীবীদের হাতে দু’হাজার টাকা করে দিতে শুরু করেছেন জরুরি তহবিল গড়ে। অশোক ঢনঢনিয়া বলেন, ‘হাইকোর্টে যাঁরা প্র্যাক্টিস করেন, তাঁদের অবস্থা তুলনায় ভালো বলে মনে করা হয়। অথচ এখনও পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি আইনজীবী আবেদন করেছেন দৈনন্দিন খরচ চালানোর অবস্থা নেই জানিয়ে। তা হলে জেলায় কর্মরত আইনজীবীদের অবস্থা সহজেই বোঝা যায়।’
তাঁর অভিযোগ, ‘এঁদের মাথার উপরে থাকলেও রাজ্য বার কাউন্সিল এখনও কোনও সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না। যদিও কাউন্সিলের বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে যদি এ সংক্রান্ত মামলা ওঠে তখন সুযোগ পেলে আমার বক্তব্য জানাব।’
সরকারের কাছ থেকেও এখনও আইনজীবীদের অর্থসাহায্যের আশ্বাস আদায় করতে পারেনি কাউন্সিল। এই দাবি ওঠার পর কাউন্সিলের সহসভাপতি সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় প্রথমে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রত্যেক আইনজীবীকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়ার আবেদন করেন। কেন হঠাৎ রাজ্য বার কাউন্সিল একেবারে কেন্দ্রের দরজায় কড়া নাড়ল, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই চিঠি দেওয়া হয় রাজ্যের কাছে। রাজ্যের আইনমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এক লাখের পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা করে প্রতি আইনজীবীকে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একদিকে ভাঁড়ারে জমা থাকা টাকার অংশ নিয়ে অনটনে থাকা আইনজীবীদের যেমন দেওয়ার ব্যাপারটা দেখা যেতে পারে, তেমনই বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আদায়ের ব্যাপারেও আমরা কাউন্সিলকে প্রস্তাব দিয়েছি।’
রাজ্যের ১৯৩টি বারের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া আইনজীবীদের পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজনে রাজ্যে চলা ৩৫ থেকে ৪০টি বেসরকারি আইন কলেজ থেকে সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলদের থেকে অনুদান নেওয়ারও দাবি তুলেছেন আইনজীবীরা। আগামী শুক্রবার এই সব বিষয় নিয়ে বার কাউন্সিলের জরুরি সভা হওয়ার কথা। সেখানে করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বার কাউন্সিল কত টাকা দিতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
কাউন্সিল সূত্রের খবর, তাদের ভাঁড়ারে যে অন্তত ২৫ কোটি টাকা জমা রয়েছে, তার মধ্যে ফিক্সড ডিপোজিট ছাড়াও রুল-৪০ ফান্ডের আওতায় আইনজীবীদের নথিভুক্তির সময়কার টাকার একাংশ জমা হয়। এ ছাড়া লাইব্রেরি ফান্ড, এনরোলমেন্ট ফান্ডও রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে আইনজীবীদের সহায়তায় কর্পোরেশন গড়া হয়েছিল। প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা জমা করে জুনিয়র আইনজীবীদের সামান্য কিছু করে ভাতা দেওয়াও শুরু হয়েছিল এক সময়ে। সব মিলিয়ে কাউন্সিলের ভাঁড়ারে ২৫ থেকে ২৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার একাংশ আইনজীবীদের মধ্যে বণ্টনের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।